বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশীদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধি.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ম্যাসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং, একপর্যায়ে প্রেম নিবেদন। দেখা করতে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক কাবিননামা তৈরি, কিছুদিন পরেই নারী নির্যাতন, যৌতুক ও দেনমোহর আদায়ের মামলা! এভাবেই অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তরাঞ্চলের একটি শক্তিশালী চক্রের বিরুদ্ধে। ঘটনার সত্যতা জানতে প্রায় দুইমাসব্যাপী অনুসন্ধান করে রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকের একটি টিম। চক্রটির অনুসন্ধানে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পড়তে হয়েছে নানামুখী বিরম্বনায়, চেপে যাওয়ার প্রস্তাব, আপোষ মিমাংসা করাসহ আর্থিক প্রলোভনও ছিল। সবশেষে তদন্ত বন্ধ নাহলে সাংবাদিকদের নামে মামলার হুমকি দেন চক্রের সদস্যরা।
এ চক্রে মা, মেয়ে, উকিল, মুহুরী,পুলিশ,কাজী,মেম্বার, চেয়ারম্যান, নারী, পুরুষ সহ অসংখ্য পরিচয়ে বিভিন্নস্থানে লোক সেট থাকার বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য আছে সাংবাদিকদের হাতে। সুত্র বলছে বিত্তবান পুরুষদের আকৃষ্ট করাসহ ফাঁদে ফেলতে আসে বিভিন্ন বয়সী নারী। যারা প্রতিনিয়তই মেকাপের মাধ্যমে গায়ের রং এবং বয়স আড়াল করেই চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণার কার্যক্রম। বিভাগীয় শহর রংপুরে আছে এই চক্রের কয়েকজন সক্রিয় সদস্য। অনুসন্ধানে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানাধীন নাজির দিগর, আক্কেলপুর এলাকায় একই পরিবারে ৫ সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়। ১| আদুরী আক্তার ওরফে রাশেদা, ওরফে রাশেদা আক্তার (আধুরী)(৩৮), পিতা- আনসার আলী, মাতা মাহমুদা বেগম। ২| আখি আক্তার(২২), ৩| রিমা আক্তার(১৯) উভয় পিতা- রবিউল ইসলাম, মাতা- রাশেদা আক্তার আধুরী, ৪| মাহমুদা বেগম(৫০) স্বামী আনছার আলী।
এ ছাড়াও এ চক্রের সাথে জরিত থাকার তথ্য মিলেছে, বগুড়া জেলার কাহালূ থানাধীন ৩নং পাইকর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, তার ছোট ভাই বজলার রহমান, ভাতিজা রাশেদসহ একাধিক ব্যক্তির। অপরদিকে রাজশাহী শহরের রনি, গাইবান্ধার ফুল মিয়াসহ একাধিক সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন তদন্তে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানাধীন নাজির দিগর, আক্কেলপুর এলাকার ছফুরা বেগম (৬৫) স্বামী মৃত্যু জামাল মিয়া বলেন, রাশেদা বেগম ওরফে আদুরী ইতিপূর্বে ৪/৫ স্বামী ধরেছে আর ছাড়ছে। এখন আবার একটা বাচ্চা ছেলেরে বিয়ে করেছে, আবার মামলাও দিছে বলে শুনেছি, তবে রাশেদা খুব উগ্র স্বভাবের। মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ড নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো. আল আমিন বলেন, রাশেদার ইতিপূর্বে কয়েকটা বিবাহ হয়েছে। আমি শুধু তার বড় মেয়ে আঁখির বিবাহ রেজিস্ট্রি করেছি।
গত ১৮|০৭|২০২৪ইং আদুরী আক্তার ওরফে রাশেদা কতৃক রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট আমলী আদালতে দায়েরকৃত মামলা-নং সি.আর -৮২/২০২৪ এর ২নং স্বাক্ষী বাদিনীর মাতা মাহমুদার নিকট মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার বিষয় আমি কিছু জানিনা! মামলা আমার মেয়ে করেছে সে ভালো বলতে পারবে।
আদুরীর ৫/৬টি বিবাহের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে রংপুর সদর উপজেলাধীন জানকি ঘুড়িয়া খাল গ্রামের মৃত. লালু মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলামের সাথে রাশেদার প্রথম বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে দুইটি কন্যা সন্তান আছে প্রথম স্বামীর সাথে সংসার ভাঙ্গার পরে বগুড়ার ফরিদ শেখকে বিয়ে করে। তার ঘরেও একটি ছেলে সন্তান আছে। পরে শুনলাম আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করেছে, বর্তমানে তার সাথে মামলা চলছে।
রাশেদার সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সে বর্তমানে মর্ডান এলাকার অজ্ঞাত একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে আসে, আমি আর কিছু জানিনা। একই মামলার ৩নং স্বাক্ষী বাদীনির আপন ছোট ভাই মো. মোর্শেদুল ইসলামের নিকট, তার বোন আধুরী ওরফে আদুরী ওরফে রাশেদার বিবাহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশেদা আমার আপন বড় বোন ঠিকই কিন্তু সে একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় আমাকে না জানিয়ে সাক্ষী বানিয়েছে। তবে বিয়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নি তিনি।
আত্র মামলার ৪নং স্বাক্ষী বাদীনির বড় মেয়ে মোছা. আখির নিকট মামলা বিষয় জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সাংবাদিকদের বলেন আপনারা আমার মায়ের পিছে লাগছেন কেন? আমার মা যতটা খুশি বিয়ে করবে তাতে আপনাদের কি? বেশী বাড়াবাড়ি করলে জেলের ভাত খাইয়ে ছারবো। রংপুর প্রশাসনসহ কোর্টে আমাদের লোক আছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া রাশেদা ওরফে আদুরীর প্রথম স্বামী, রবিউল ইসলামের বাড়িতে একাধিকবার গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তার বড়ভাই আলমগীর হোসেন গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে রবিউলের স্ত্রী রাশেদার কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন, আল্লাহ রাশেদার ভালো করবে না। সে আমাদের পরিবার ইজ্জৎ নিয়ে তামাশা করেছে। ইদানীং তার নামে বহু বিবাহের খবর প্রায় শুনি। পার্শ্ববর্তী এলাকায় হওয়ায় খবরগুলো পাচ্ছি।
মামলা, কাবিন বানিজ্য ও মানুষ হয়রানির বিষয় জানতে, একাধিকবার রাশেদা ওরফে আদুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন এব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবে আমার দুলাভাই, রংপুর জর্জ কোর্টের মুহুরী আলতাফ হোসেন রেজি- ০১/০৬, এডভোকেট বদরুল ইসলাম বিব্বুর সহকারী। এবং মুহুরীর ফোন নাম্বারও দেন তিনি।
আলতাফ মুহুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রংপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডাকেন। সেখানে তার কাছে আদুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে, উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই আদালতে এমন অসংখ্য আদূরী আছে। আপনারা তাদের কাছে জান। এর বিষয়ে কিছু লেখার দরকার নাই। আর আমি সাংবাদিকদের কিছু বলতে বাধ্য নই। কথাবার্তার একপর্যায়ে মুহুরী আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সারাদিন কোর্টে পরে থাকি, এখানে বেশী সাংবাদিকতা করতে হবেনা। আদুরী ওরফে রাশেদাকে নিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি করার দরকার নাই। যদি করেন তাহলে আপনাদের নামেও মামলা হবে।
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব……।